শুভ-শান্তি পূর্ণ হোক আসন্ন দুর্গাপূজা
জন্ম থেকে জ্বলছি- সেই কথার মতো প্রায় বহুদিন হল দেখছি বিশেষত: সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজার সময় নিরাপত্তা দিতে জোরদার শুরু হয়। এখন প্রশ্ন হল একটি গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক সভ্য আধুনিক সমাজে এমনটা কেন? আমরা ছোটবেলায় এই তাড়াশে পূজা-পার্বণ দেখেছি উপভোগ করেছি। সে আনন্দে-উল্লাসের কোন সীমা ছিল না। তখন তাড়াশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল অধিক। পূজার আয়োজন-আরম্ভর জাঁকজমক জৌলুশ ছিল এখনকার দিনের চেয়ে বেশি। উৎসাহ, উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য ছিল বাঁধ ভাঙ্গনের মতো। তবে কোন প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং ভয়ভীতি আতঙ্ক-আশঙ্কা দেখি নি। বরং আজো যেমন অতীতেও তেমনি মুসলিম জনগোষ্ঠী না এলে হিন্দুদের পূজা-পার্বণ জমতোই না। উভয় সম্প্রদায়ের অকৃত্রিম ও আন্তরিক সম্মেলনে শারদীয় পূজা হতো আনন্দে উল্লাসে ষোল কলায় পূর্ণ। সেটা ওই পুরনো দিনের জনপ্রিয় গানের মতো- “আগে কি মোরা দিন কাটাইতাম”! তাহলে আজ এমনটি হল কেন? আমাদের স্থানীয় সমাজের প্রেক্ষাপট ধরলে এখানে হিন্দু মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের বসবাস মাত্র, অন্যরা নগণ্য, ধর্তব্য নয়। আর এই দুই জনগোষ্ঠীর একত্রে মিলেমিশে মধুর সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বসবাস হাজার বছরের ইতিহাস। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা ভারতবর্ষেই। এই ধর্মীয় সম্প্রীতিই আমাদের সমাজের মূল সৌন্দর্য, শান্তির প্রতীক, অহিংসা, ভালোবাসা ও মানবতার বহিঃপ্রকাশ। আমরা যে ইসলামের কথা বলি তার মূল মর্মই তো মানবতা। থাকে তো শারীরিক আক্রমণ বরং একজন মুসলমানের জিহবা দ্বারাও অন্যের ক্ষতি ও অশান্তি এ ধর্মে নিষিদ্ধ। অন্য ধর্মাবলম্বীদের জানমাল সুরক্ষায় ও তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও প্রেমের নিদর্শনমূলক অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে ইসলামের ইতিহাসে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বরঞ্চ প্রেম ও ভালোবাসায় মুগ্ধ করেই তো ইসলামের প্রসার ও বিস্তার জগত জুড়ে। তাই যদি হয় তবে আজকে এই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কেন ভিন্ন কাহিনী আর নানা *** প্রকার দিয়ে সনাতন ধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিশ্চিত নিরাপত্তা, জীবনযাপন, ধর্মচর্চা সহ সকল শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার জন্য আমরা মুসলিমরাই তো গ্যারান্টি, জিম্মাদার, সদা সহযোগী ও অকৃত্রিম সুহৃদ। তাই আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে কোন ভয়ভীতি, সংশয়-সন্দেহ আদৌ থাকা উচিত না। শুধু তাদের পাশে নয়, সবাইকে সাথে নিয়েই তো নির্ভয়, নির্ভার ও মুক্ত অবারিত এই আনন্দঘন মুহূর্ত। আমরা কেবল বাঙালি জাতি নয়, আমরা মানবজাতি, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব ও জাতি। বিশেষভাবে স্মরণে রাখতে হবে কোন মুসলিমের দ্বারা কোন অজুহাতেই স্বধর্মীয় বা ভিন্ন ধর্মের কারোই ক্ষতি ও অকল্যাণ করা সম্ভব নয়, কল্পনা করা যায় না। ভিন্ন মত ও পথের সাথে আমি একমত হতে না পারি তবে তা রক্ষায় আমি জীবন দিতেও পারি। এই হোক আমাদের সংকল্প এবং অঙ্গীকার। শুভ, শান্তিপূর্ণ হোক আসন্ন দুর্গাপূজা।