তাড়াশে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি
প্রশাসন ও পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন
তাড়াশ উপজেলায় চলতি বছরের প্রথম দিকে গরু চুরি শুরুর মধ্য দিয়ে আইন শৃঙ্খলার দৃশ্যমান অবনতি ঘটে। সেই থেকে প্রায় সারা বছর প্রায়শ গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাকার চুরি অব্যাহতভাবে চলছে। এ নিবন্ধ লেখার সময়ও গরু চুরি তৎপরতা থেমে নেই। সদ্য মাত্র পাওয়া খবরে তাড়াশের নিকটবর্তী ভাদাশ গ্রামে ব্যবসায়ীর বাড়ীতে দিনের বেলা ডাকাতির খবর জানা গেল। গ্রামের আব্দুল মালেক পার্শ্ববর্তী মালশিন গ্রামে সকালে সপরিবার বেড়াতে যায়। সন্ধ্যায় ফিরে এসে দেখেন তার বাড়ীতে চোর বা ডাকাতরা স্বর্ণসহ নগদ ৫ লক্ষাধিক টাকা লুট করে নিয়ে গেছে এবং বাসার সবকিছু তছনছ করেছে।
উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বছর জুড়েই গরু-মহিষ চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে।আনুমানিক শতাধিক গরু এ যাবৎ চুরি হয়েছে যার মূল্য কোটি কোটি টাকা। শুরুতে তাড়াশ থানা কর্তৃপক্ষ তৎকালীন পৌর মেয়র ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়ে গ্রামাঞ্চলে রাত্রিকালীন পাহারার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানায়। পাশাপাশি থানা পুলিশের টহলও জোড়দার করে। এ সম্পর্কে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায়ও আলোচনা হয়। কিন্তু মনে হচ্ছে তাতে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয় নি বা পরিবর্তন হয় নি। বিশেষ করে গরু চুরি ধারাবাহিকভাবে চলমান আছে এবং উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। কোন কোন সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গরু চুরির ঘটনা ঘটছে মর্মে খবর আসছে। দেশে এমনিতেই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আইন শৃঙ্খলার অবনতিশীল পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হয় নি। এই সুযোগে তাড়াশের বিভিন্ন এলাকায় চুরি-চামারি, ডাকাতি সহ নানা প্রকার দস্যুবৃত্তি ও নাশকতামূলক কর্মকান্ড বেড়ে চলেছে। বর্তমানে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা বাতিলের পর ইউনিয়ন পরিষদও বাতিলের কথা শোনা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় উপজেলা পরিষদ ইউএনওর নেতৃত্বে ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা আশু প্রয়োজন যাতে উপজেলায় ক্রমবর্ধমান চুরি ডাকাতির লাগাম টানা যায়। আগের দিনে চলনবিলস্থ তাড়াশের অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ সমাজে চুরি, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হরহামেশাই লেগে থাকতো। এখন তো সেদিন নেই, সমাজ কাঠামো নেই সে পর্যায়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সমাজ ব্যবস্থারও অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। ফলে জনসচেতনতা ও পুলিশী তৎপরতা বৃদ্ধি করে এই অপরাধমূলক সমাজ প্রবণতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।উল্লেখ্য,বিপুল সংখ্যক গরু চুরির কারণে এলাকার বহু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এই আধুনিক আলোকিত যুগে যদি চোর-ডাকাতের অভয়ারণ্য থাকে, তাদের রোখা না যায়; তবে আর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির বুলি আওড়ানো অর্থহীন। সবশেষে বলবো, তাড়াশে লাগাতার চুরির যে বাড়বাড়ন্ত তা দমনে ও নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক পন্থার বাইরে থানার কি করণীয় আছে সেটা সুচিন্তিতভাবে ভেবে তাদের সে মোতাবেক সঠিক পরিকল্পনা, কৌশল ও ফলপ্রসু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে-এর বিকল্প নেই। কেননা তাড়াশ থানার কেবল ব্যর্থতা ছাড়া সাফল্যের কোন নজির এক্ষেত্রে অদ্যাবধি দেখা যাচ্ছে না, এটা দুঃখজনক। তবে যে করেই হোক এ মুহুর্তে তাড়াশের জনজীবন ও জানমালের শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সবচেয়ে জরুরী কর্তব্য। সেটা যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল।